সর্বশেষ আপডেট : ১১ ঘন্টা আগে
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

দিল্লির হিন্দু-মুসলিম, ভেঙে গেছে সৌহার্দ্য আর বিশ্বাস!

ভাগীরথী বিহারের চার নম্বর লেন ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় পুড়িয়ে দেওয়া সাতটি বাড়ি এবং কয়েকটি দোকান দেখালেন আসিফ আলী।

আসিফ বললেন, ওরা কেউ এই এলাকার বাসিন্দা না। খুব সম্ভবত পাশের গঙ্গাবিহার এলাকা থেকে এসেছিল। আমাদের প্রতিবেশীরা কেউ এখানে আগুন জ্বালায়নি। তবে, আমি বাসার ছাদ থেকে দেখেছি, প্রতিবেশীরাই ওই মানুষগুলোকে আমাদের বাড়িঘর দেখিয়ে দিয়েছে।

রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন আসিফ। সেই রিকশাটাও পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে চারতলা বাড়িটির সমস্ত আসবাবপত্র। রাতে যখন রাস্তাঘাট তুলনামূলক নিরাপদ ছিল, তখন দড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে পরিবারের নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ মোট ছয়জন।

আসিফ বলেন, নিচের তলায় যখন আগুন জ্বলছিল, ধোঁয়ায় আমাদের তখন প্রায় দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। আমি দুই ঘণ্টা ধরে পুলিশকে ফোন করেছি। একজন ফোন ধরে আমাকে জিগ্যেস করেছে আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? কথা হওয়ার পরেও পুলিশ আমাদেরকে সাহায্য করতে আসেনি।

যমুনা নদীর যেদিকে পয়নিষ্কাশনের নালাগুলো গিয়েছে সেখানে ক্রমাগত পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল। যে জায়গায় এর আগে প্রায় দুই মাস ধরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল সেখান থেকেই যমুনার পাশের জনবসতির উপরে পাথর ছোঁড়া হয়।

এখানকার পরিবেশ অন্যান্য এলাকার চেয়ে আলাদা। হিন্দু-মুসলিম সবাই এখানে মিলেমিশে থাকে। সহিংসতার পর, হয়তো এখানেও হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে আর মিলেমিশে থাকা সম্ভব হবে না।

তবে, প্রতিবেশীদের সাহায্যে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা জানান মো. নাজিম। তিনি বলেন, আমি নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি রাস্তায় দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি চলছে। তখন প্রাণ বাঁচাতে মুস্তাফাবাদের এক মুসলিম বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, সৌভাগ্যের বিষয়, আমার পরিবারের সবাই তখন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সন্ধ্যার পর আমার হিন্দু প্রতিবেশীরা আমাকে ফোন করে জানায়, তোমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। আমরা পানি ঢেলে আগুন নিভিয়েছি।

নাজিমের দোকান, মোটরবাইক এবং রান্নাঘরের সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। সবসময় ভয়ে কাঁপতে থাকি। অনেককেই দেখি রাতের বেলা উঠানে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু, তাদেরকেও আমার সন্দেহ হয়। আমার সবসময় মনে হয় তারাও যেকোনো সময় সহিংস হয়ে উঠতে পারে।

একই এলাকার বাসিন্দা শওকত আলী (৬৫)। তার পরিবারের সাতজনকেই প্রাণ বাঁচাতে ছাদ বেয়ে পালাতে হয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার সময় একটা পাথর শওকত আলীর নাতনির মাথায় এসে আঘাত করে।

শওকত আলীর বাড়ির নিচতলায় এক হিন্দু ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেলের দোকান ছিল। সংঘর্ষের সময় সেই দোকানও ভাঙচুর করা হয়। দোকানের মালিক রমেশ চাঁদ এবং তার ছেলে প্রকাশের প্রায় ৮০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।

শওকত আলী বলেন, ওদের দোকানের সামনেই হিন্দু দেব-দেবীর ছবি রাখা ছিল। অন্তত ওদেরকে ছেড়ে দিতে পারতো। আমার পুরো বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আত্মীয়ের বাসায় থাকছি। আমাদের প্রতিবেশী সুশীল অনেক চেষ্টা করেছিলো আমাদের বাড়িটিকে বাঁচানোর। কিন্তু, তোপের মুখে তাকে সরে যেতে হয়েছে।

ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোকে ২৫ হাজার রুপি করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কেউই কোনো অর্থসাহায্য পাননি। সোমবার মন্ত্রী রাজেন্দ্র পাল গৌতম এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের ফরম পূরণ করতে বলেছেন।

সহিংসতায় হার্ডওয়ারের দোকানের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে জাফরের। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা যদি ঠিকঠাক চলতো, তাহলে কখনোই দাঙ্গা বাধতো না।

লেন ১ এর দুই হিন্দু বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি লন্ড্রি এবং একটি ক্লিনিকের কিছু অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। ওই লন্ড্রির মালিক কমলেশ কুমার বলেন, আমি কাউকে দোষ দেই না। তবে, আতঙ্ক কাটেনি। এই ঘটনার পর এখন পর্যন্ত আমি আমার তিন ছেলেকে বাসা থেকে বের হতে দেইনি।

তার স্ত্রী এক পলক মুসলিম প্রতিবেশীদের পুড়ে যাওয়া বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, না, ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পর কী হবে কে জানে!

শিববিহার এলাকাটিকে এখনো রণক্ষেত্র বলে মনে হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারির সহিংসতায় প্রায় চার লাখ টাকার গয়না লুট হয় এই এলাকার বাসিন্দা আশোক কুমারের। তবুও তিনি সোমবার দোকান খুলে বসেছেন।

আমি কয়েকজন মুসলিমকে এগিয়ে আসতে দেখি। তখন, দোকান বন্ধ করে পালাই। আজকেও দোকান খুলতে গিয়ে আমার কিছুটা ভয় লেগেছিল। কিন্তু জীবন তো চালাতে হবে। দোকান যখন লুট করা হচ্ছিল তখন স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম ছেলে আমাকে সেটা জানায়। আমি ওদেরকে বলি, যা করছে করতে দাও। আমি পরে গিয়ে দেখছি।

সোমবার ধর্মেন্দ্র শর্মার মিষ্টির দোকানও খোলা ছিল। ২৫ তারিখে তাড়াহুড়ো করে দোকান বন্ধ করার সময় সেখানকার তিনজন কর্মচারী আহত হয়। সমুচা ভাজার গরম তেলের উপর গিয়ে পড়েছিলেন তারা।

ধর্মেন্দ্র শর্মা বলেন, আমার দোকানের ৬০ শতাংশ ক্রেতা মুসলিম। সম্প্রদায়ের লোকজন এবং রাজনীতিবিদরা এখনো সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছেন না। এই কারণেই আমি এখন দোকানে বসতে ভয় পাচ্ছি। তবে, আমার ক্রেতাদেরকে আমি চিনি। তারা আমার মিষ্টি পছন্দ করে।

ভাগীরথী বিহারের কাছেই একটি এলাকায় রেল ক্রসিংয়ের উপর একসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন হিন্দু ও মুসলিম বাসিন্দা।

তাদের একজনের নাম আনোয়ার, পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, আমরা নিরাপদে আছি কারণ আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি আছে। আমাদের মধ্যে কেউ কারো বাড়িঘর কাউকে দেখিয়ে দেয়নি। তবে, এক সপ্তাহ ধরে আমরা কোনো কাজ পাচ্ছি না। কারণ আমাদের আশেপাশের সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: